শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
বিডিনিউজ : জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানের তাগিদ দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘের একটি কমিটিতে।
রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সাথে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা, এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সকল মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে।
ওআইসি ও ইউরোপিও ইউনিয়নের আনা এ প্রস্তাব বুধবর সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে (সোশাল, হিউম্যানিটারিয়ান অ্যন্ড কালচারাল) সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রস্তাবটি অনুমোদনের সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, “জাতিসংঘে এবারই প্রথম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হল রোহিঙ্গা রেজুলেশন, যা এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এ প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং জরুরি অবস্থা জারির পরের পরিস্থিতি।
চলতি বছরের গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় সেনাবাহিনী। শীর্ষ রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার করে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। এর পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও অস্থিরতা, এরই মধ্যে সেখানে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে সামরিক জান্তার দমন-পীড়নে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, থার্ড কমিটির অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নাগরিকদের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখাতে দেশটির নিরাপত্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি যেন আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর, আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং জরুরি অবস্থার অবসানের আহ্বান জানানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে।
প্রস্তাব পাসের প্রক্রিয়ার সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি বলেন, সামরিক জান্তার দমন-পীড়নে দেশের সকল নাগরিককে যে ভুগতে হচ্ছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অভ্যুত্থানের আগে ও পরে সেনাবাহিনীর চালানো সন্ত্রাস ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিবরণও তিনি বক্তৃতায় তুলে ধরেন।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। হাজারো বেসামরিক নাগরিক ঘারবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে।
মার্টিন লুথার কিংয়ের বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কোথাও যদি অবিচার হয়, তা সুবিচারের প্রতি হুমকি তৈরি করে সব জায়গায়। আমরা সুবিচারের জন্য লড়ছি।”
২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখেই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। সে সময় ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতিসংঘ।
সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানিয়েছে, থার্ড কমিটিতে পাস হওয়া প্রস্তাবে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
“রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মিয়ানমার, ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপি এর মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও এর কার্যকর বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে রেজুলেশনে।”
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের হতাশা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, যা এ অঞ্চলে নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়া এবারের প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগাবে এবং দীর্ঘ এ সমস্যার টেকসই সমাধানে ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা’ রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের দূত।
বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানিয়েছে, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এবারের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১০৭টি দেশ সমর্থন দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের রেজুলেশন গৃহীত হলো যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছে।”
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply